গত পর্বে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কী, তা নিয়ে খুব সরল ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন এই মতবাদ কত টা ভিত্তিহীন ও হালকা।এখন ভাবার বিষয় এই ভিত্তিহীন মতবাদ কী করে এত আলোড়ন তৈরি করলো,কি ভাবে পশ্চিমা বিশ্বের উপর রাজত্ব কায়েম করলো,কেন পশ্চিমারা এত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরছ করছে এই মতবাদ কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য? কি এর পিছনের উদ্দেশ্য?
ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের উদ্দেশ্যঃ
১. সোজাসাপটা বললে ট্রান্সজেন্ডার এজেন্ডার মূল লক্ষ হলো খুব সূক্ষ্মভাবে সমাজে "সমকামিতা" এর মতো জঘন্য ও নিকৃষ্ট বিকৃত যৌনতা কে প্রতিষ্ঠা করা।আসুন একটা গল্প শুনি,মনে করেন শরিফ এবং করিম সমকামী। পশ্চিমা বিশ্বে এর বৈধতা কয়েকযুগ আগে হলেও আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী এই নিকৃষ্ট যৌনতা নিষিদ্ধ। তাই শরিফ আর করিম সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি পাবে না। কিন্তু শরিফ যদি নিজেকে মনে মনে নারী দাবি করে এবং সমাজে যদি তার স্বীকৃতি আদায় করতে পারে তবে দেখানো যাবে,শরিফ করিমকে বিয়ে করছে না বরং একটা ট্রান্স নারী করিম কে বিয়ে করছে।অথ্যাৎ বাহির থেকে এই সম্পর্ককে স্বাভাবিক ছেলে মেয়ের বিষয় উপস্থাপন করে, সমকামীতা প্রতিষ্ঠা করছে।এর আল্টিমেট ফলাফল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ সমকামীতা।
২. অবাধ যৌনাচার, ব্যভিচারকে প্রসার করা। কারণ ট্রান্স মতবাদ একবার কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এই ফিতনা যে প্রকোপ আকার ধারণ করবে সেটা বলাই বাহুল্য। কারণ তখন নারীর রূপ ধারণ করা পুরুষেরা নারীদের বেডরুম, টয়লেট ইত্যাদি সব জায়গায় অবাধে ঢুকে যাবে। বিদেশের জেলখানায় এমন ট্রান্স পুরুষ কর্তৃক নারীবন্দী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও সদ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে । সুতরাং জেলখানাতেই যদি এমন হয়, বেডরুম আর টয়লেটে যে নারীরা সুরক্ষিত থাকবেন না, এটা প্রশ্নাতীত বিষয়।
৩.পশ্চিমা রীতিনীতি চালু করে ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করা। সমাজের মানবিক মূল্যবোধ কে ধসিয়ে দেওয়া,বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ বলতে কিছু থাকে না সেখানেই শুরু হয় নাস্তিক্যবাদ।মানুষ হয় নিজের ইচ্ছের ও পশ্চিমাদের গোলাম।
যে তিনটা উদ্দেশ্য তুলে ধরলাম, এর সবগুলোই একটা সমাজব্যবস্থাকে, একটা দেশকে গোড়া থেকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
ট্রান্সজেন্ডারবাদ কেন সমাজের জন্য ক্ষতিকরঃ
এতক্ষণ এই মতবাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে আলোচনা হলো তা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন এই মতবাদ সমাজের জন্য কতটা ভয়ংকর। এবার একটু সাধারণ জনজীবনের দিকে তাকানো যাক..
সমাজে নারীদের নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবেনা।একজন পুরুষ ট্রান্সনারী সেজে নারীদের টয়লেট, বেড রুম যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াবে।কেউ কিচ্ছু বলতেও পারবে না।নারীদের হোস্টেলে,সংশোধনাগার সব জায়গাতেই নারীদের সাথে একসাথে থাকার সুযোগ পাবে।এইসব ট্রান্সজেন্ডারদের হাতে নারীদের ধর্ষন হওয়ার ঘটনা নতুন নয়।
এই মতবাদকে মেনে নেওয়া মানে বিভিন্ন যৌনতা কে বৈধতা দেওয়া।সমাজে নারী পুরুষের সীমারেখা মুছে দেওয়া। LGBTQ এর মতো নিকৃষ্ট ও প্রজন্ম বিধ্বংসী মতবাদ কে স্বাভাবিকরন করা।সৃষ্টি ও সমাজের কাঠামোকে ভেঙ্গে দেওয়া।যার যা ইচ্ছে সেই লিঙ্গের পরিচয় দিয়ে সমাজে পিতা,মাতা, নারী, পুরুষ, বিয়ে এই সব বিষয়গুলো অর্থহীন করে তোলা।এককথায় একটা প্রজন্মকে ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করা।
বাংলাদেশ ও ট্রান্সজেন্ডারবাদঃ
বাংলাদেশে গোপনে অনেক আগে থেকেই এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ চলছে।এর মধ্যে রয়েছে নানা সংগঠন, এনজিও,মেইনস্টিম মিডিয়া। এইসব বিষয় একসাথে উল্লেখ করে জটিলতা সৃষ্টি করতে চাই না।আমরা চাই সব শ্রেণির পাঠকের জন্য সহজ ও সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে।তাই এই মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা ব্যাক্তিবর্গ কে প্রধান ৩ টি ভাবে ভাগ করেছি।
১.তথাকথিত সামাজিক সংগঠনঃ সামাজিক কাজের নাম দিয়ে ট্রান্সমতবাদ কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বাংলাদেশে কাজ করছে নানা সংগঠন। বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু সংগঠন হলো বন্ধু ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, সম্পর্কের নয়া সেতু, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ, নো পাসপোর্ট ভয়েস, ট্র্যানসেন্ড, পথচলা বাংলাদেশ ইত্যাদি।দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দেশব্যাপী ট্রান্সজেন্ডারবাদ নিয়ে কাজ করছে ৩০টি কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন।এর মধ্যে ঠিক কোন গুলো ইন্টারসেক্স তথা হিজড়াদের নিয়ে কাজ করে তা পরিষ্কার নয়।
২.বিভিন্ন এনজিওঃ পশ্চিমা বিশ্বে নিজের প্রতিষ্ঠার পর এই মতবাদকে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠা করা জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরছ করছে নানা বিদেশি এনজিও।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা ঢালছে আরকাস ফাউন্ডেশন (Arcus Foundation)। এই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে অ্যামেরিকান বিলিয়নেয়ার জন স্ট্রাইকার। স্ট্রাইকার নিজে একজন সমকামী। তাদের এই টাকা যারা আমাদের দেশে এনে তাদের হয়ে কাজ করছে তারমধ্যে প্রধান চরিত্র হিসেবে আছে ব্র্যাক।
নিজের সামাজিক সংগঠন নাম দিয়ে কৌশলে বিকৃত যৌনতা কে প্রচার করছে এরা।নিজেদের বিভিন্ন প্রচারনায় কৌশলে বাচ্চাদের শিখাচ্ছে বিকৃত যৌনতা,পর্ন,মাস্টারবেশনের মতো ভয়ংকর নোংরামি।
ব্র্যাক এর আমলনামা লিখতে হলে আলাদা একটা পর্ব হয়ে যাবে।তবে যারা আগ্রহী তারা সালাফি সেন্ট্রাল পেইজের ব্র্যাকের মুখোশ উন্মোচন শিরোনামে ভিডিও গুলো দেখতে পারেন।এছাড়াও UNDP, UNFPA এমনকি ইউনিসেফ এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও মানবাধিকারের নামে এই ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ প্রচার করছে।
৩. মিডিয়াঃ বাংলাদেশের ৯০% মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ভুলভাল তথ্য দিয়ে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কে নরমালাইজ্ড করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।মিডিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মিডিয়া যাই দেখায় তাই মানুষ সত্য হিসেবে ধরে নেয়। সেটা যে কোন ক্ষেত্রে হোক মানুষের পোশাক কি রকম হবে সে কি রকম স্টাইলের হবে,সে কি ব্যবহার করবে সব।কোন সামাজিক ইস্যুর ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই হয়। কোন ইস্যুর বিরুদ্ধে মানুষের মনোভাব কি রকম হবে সেটা মিডিয়া ঠিক করে দেয়। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু বেশি পচার হয়েছে একমাত্র মিডিয়ার কারণে।আপনি যদি কোন মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ভিজিট করেন তবে দেখতে পাবেন ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুর কোন বাস্তব দিক সেখানে তেমন উল্লেখ নেই।শুধু মাত্র তাদের কে অসহায় হিসেবে উল্লেখ করে মানুষের ব্রেইনওয়াশ করছে।রূপান্তরকামিতা নিয়ে বিভিন্ন ড্রামা, টকশো, ইন্টারভিউ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের কে প্রমোট করছে।
কী! আশা করি এতক্ষণে আপনাদের চোখের সামনের কালো পর্দা টা সরাতে পরেছি।দেখয়েছি বাস্তবতা কে।কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ? যেই সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের জন্য কষ্ট করে যাচ্ছেন দিন-রাত।সকালের ঘুম হারাম করে তৈরি করছেন সন্তানের খাবার, সেই সন্তান যদি এই ট্রান্সজেন্ডারবাদের শিকার হয় মেনে নিতে পারবেন?পারার কথাও না।আপনারা কেউ চান না নিজের সন্তানের জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিতে।তাহলে করণীয়? হ্যাঁ দ্বায়িত্ব এখন আপনারই,নিজের সন্তানের মতো হাজারো বাচ্চাদের রক্ষার জন্য সোচ্চার হতে হবে আপনাদের।শুরু করতে হবে প্রতিবাদ,রুখে দিতে হবে এই রংধনু(সমকামী প্রতিক) সন্ত্রাস।বাকি আলোচনায় উল্লেখ করা হবে আমাদের করণীয় দিকগুলো নিয়ে।
লেখক : তানভীর হোসেন ( SI & WRITER)
রেপারেন্সঃ অবক্ষয়কাল-আসিফ আদনান,তানজিল আরেফিন আদনান।
আসছে শিগ্রই...
Post a Comment