ট্রান্স জেন্ডার মতবাদ | শেষ পর্ব


গত ২ পর্বে ট্রান্সজেন্ডার মতোবাদের ভয়াবহ রূপ নিয়ে সরল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।আশা কি এটা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই মতবাদ কোন নিদিষ্ট ধর্ম বা জাতির মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।বরং সকল ধর্ম,বর্ণ,জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য ভয়ানক বিষয়।মিডিয়া শুধু মাত্র ইসলাম ধর্মের দিকে ইঙ্গিত করে বুঝাতে চায় এটা শুধু মুসলিমদের সমস্যা বাকি ধর্মের কোন সমস্যাই যেন নেই।কিন্তু এই বিষয়টিও মিডিয়ার কতৃক একটি প্রোপাগান্ডা।প্রজন্ম বিধ্বংসী এই ভয়ংকর মতবাদ  সকলের জন্য আতঙ্ক। তাই প্রতিরোধও করতে হবে সকলের।আজকে আলোচনা করা হবে আমাদের করণীয় দিক গুলো নিয়ে।তার আগে কিছু সংশয় দূর করা যাক।

➤ প্রাঠ্যপুস্তকে কি সত্যিই ট্রান্সজেন্ডারবাদ শিখানো হচ্ছে?
জ্বী,পাঠ্যপুস্তকে খুব সুক্ষ্ম ভাবে কোমল মতি শিশুদের শিক্ষানো হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও বিকৃত যৌনতা।  ২৫ ডিসেম্বর ২০২১,বাংলা ট্রিবিউন নামক অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত গোঁজামিলে তৈরি হচ্ছে নতুন কারিকুলাম শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে কিছু অংশ তুলে ধরা হলোঃ
❝এনজিওর প্রেসক্রিপশন জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) নির্দেশিকাতেই নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। এমন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিরোধও দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও নবায়ন কার্যক্রম ও জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির (সিডিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় রক্ষায় গঠন করা ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর আহ্বায়ক এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, ১৫ সদস্যের ওই গ্রুপের ছয়জন সদস্যকে বাইপাস করে ইউনিসেফ, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কারিকুলাম তৈরির কাজ হচ্ছে। এনজিও প্রতিনিধিরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটাই করছেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান।তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এনজিওদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও ১৫ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপে এনজিও সংশ্লিষ্টদের নাম রয়েছে।❞
বুঝতেই পারছেন পশ্চিমা এজন্টের তৈরি শিক্ষাকার্যক্রম তাদের নোংরা সংস্কৃতির মতোই হবে।এবার দেখা যাক পাঠ্য পুস্তকের দিকে,
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড NCTB সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ৫১-৫৬ পৃষ্ঠায়শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখায় সরাসরি ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৫১ পৃষ্ঠায় মূল চরিত্র শরীফা বলছে,
“আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে....."─
৫৫ এবং ৫৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
‘আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।’ 
এই গল্পে শরিফা নিজেই স্বীকার  করেছে সে একজন ছেলে ছিল।তার নাম শরিফ আহমেদ ছিল।কিন্তু আস্তে আস্তে যখন বড় হয় তখন নিজেকে মেয়ে ভাবতে শুরু করে।শিশুরা নতুন কিছু শিখতে চায় কারণ এটাই তাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যদি বয়ঃসন্ধির শুরু এই বিকৃত মতবাদ শিখানো হয় তবে তার ভবিষ্যৎ কতটা ঝুকিপূর্ণ তা বলাবাহুল্য। এছাড়াও বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে আরো অনেক গোঁজামিল। সচেতন সমাজ ও অভিভাবকরা কখনোই তাদের সন্তানদের এমন  বিকৃত শিক্ষা প্রদান মেনে নিতে পারে না।

➤ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রান্সজেন্ডারবাদঃ
 ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে দেশের শীর্ষ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার ফতোয়া হলোঃ 
❝আল্লাহ তায়ালা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। যাকে যেভাবে সৃজন করার দরকার তাকে সেই রূপেই সৃজন করেছেন। মানুষকে জমিনে নিজের খলিফা হিসেবে মনোনীত করেছেন।এবং মানবজাতির হেদায়েতের জন্য বিভিন্ন বিধান অবতীর্ণ করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে নারী পুরুষের বিধান গুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । এখন যদি এর বিপরীতে গিয়ে সবাইকে তার মনের রূপকে রূপান্তর করার অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে পুরো সমাজ ব্যবস্থার চিত্রটায় পাল্টে যাবে এবং ইসলামি শরীয়াহ পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে যাবে। যা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের নামান্তর। পশ্চিমা বিশ্ব এইটা বিশ্বব্যাপী চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অজান্তেই তাদের ফাঁপা বুলি ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর আঘাত করছে। সাথে সাথে ঈমান বিধ্বংসী এই ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতির সবক দেয়। আর আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করা অত্যন্ত পাপ ও হারাম কর্ম। যা আজ পশ্চিমা বিশ্বের দোসররা মুসলিম দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর এবং তা প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের দায়িত্ব, ঈমান বিধ্বংসী এই ফিতনার লাগাম টেনে ধরা এবং এর প্রসার রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। অন্যথায় এই পাপের শাস্তি হিসেবে যদি আল্লাহ তায়ালার গজব নিয়োগে নেমে আসে, তাহলে তা আমি, আপনি এবং আমাদের সবাইকে গ্রাস করে নিবে।
কারণ
 আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা ভয় করো ওই শাস্তিকে, যেটা শুধু তোমাদের মাঝে সীমালঙ্ঘনকারীদের উপর আসবে না (বরং শক্তি থাকা সত্ত্বেও যারা এটা প্রতিহত করেনি তাদেরকেও গ্রাস করে নিবে।)❞
ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ নিয়ে শায়খ হারুন ইজহার (হাফিঃ)এর বক্তব্য/ফতোয়া হলোঃ
❝যেকোন কবিরা গুনাহ সেটা কবিরা গুনাহ, কোন কবিরা গুনাহ করলে মানুষ অমুসলিম হবে না, কাফের হবে না। কিন্তু কবিরা গুনাহকে যখন কেউ হালাল মনে করবে, তখন সে কাফের হয়ে যাবে। ট্রান্সজেন্ডারবাদ  যারা করছে,  এটাকে তাকে কবিরা গুনাহ মনে করে করছে না, হালাল মনে  করে করছে। এটাকে তারা আইন করতে চাচ্ছে। সুতরাং ট্রান্সজেন্ডার মতবাদে যারা বিশ্বাসী হবে, যারা এটাকে প্রচার করবে, যারা এটাকে আইন করবে, সমর্থন করবে আমি ফতোয়া দিচ্ছি সমস্ত ওলামা কেরামের পক্ষ থেকে তারা কাফের হয়ে যাবে।❞
অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিষয় গুলো মেনে নেওয়া নৈতিক অধঃপতন পাশাপাশি প্রজন্মকে নিয়ে যাবে জঘন্য হারাম, এমনকি কি কুফরের দিকে।
পাঠ্যপুস্তকের কথা গুলো সরাসরি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানি করা।"যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কারও ক্ষতি না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত যা খুশি করা যায়" – এই মূলনীতির মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে সমকামিতা, “সমকামি বিয়ে” থেকে শুরু করে ব্যভিচারসহ প্রায় সব ধরণের বিকৃত যৌনাচার ও জীবনাচরণকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। সকল মূল্যবোধ মুছে গেছে। পশ্চিমা বিশ্বের পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। সারাজীবন সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ করে যাওয়া পিতামাতাকে বুড়ো বয়সে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। আমরাও কি এমন সমাজ চাই?

➤ বর্তমান বাস্তবতায় অভিভাবকদের দায়িত্বঃ
১। ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের ভায়বহতা সম্পর্কে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো
২। ট্র্যান্সজেন্ডার ইস্যুর ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্ভাব্য সকল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দল মত ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন করা
৩। আপনার আদরের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। কেউ যেন তার মগজধোলাই করতে না পারে। কেউ যেন তাকে মানসিক ও যৌন বিকারগ্রস্থ বানিয়ে তার জীবন নষ্ট করতে না পারে।   
৪। পাঠ্যবইয়ে ট্র্যান্সজেন্ডার মতবাদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করা।
৫| যুবকদের মাধ্যমে সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করা।
৬| এই মতবাদ বিষয়ক সভা,সেমিনার আয়োজন করে সচেতনা বৃদ্ধি করা।
৭| যারা শিক্ষক আছেন তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের এই মতবাদ সম্পর্কে সচেতন করা।
৮| পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে নিজেকে এবং পরিবার কে রক্ষা করা।
পরিশেষে এতটুকু বলতে চাই,বাংলাদেশ এক ভয়ানক সংকটের মধ্যে আছে।গোটা জাতিকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এক মৃত্যু পাদে।এই উম্মাহর যদি সবচেয়ে পাপী বান্দাও হন,তাও আপনার দ্বায়িত্ব এই মহূর্তে এই মতবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। 

꧁আল্লাহ হাফেজ꧂
লেখক :তানভীর হোসেন (A MEMBER OF TEAM SI)
রেফরেন্সঃ
1.Asif Adnan(Chintaporad.com)
2.Mufti Harun Izhaar 
3.Department of Fatwa & Islamic law Research , Al-Jamiatul Ahliah Darul Uloom Moinul Islam Hathajari,Chattagram |




Post a Comment

Previous Post Next Post