সাধারনতভাবে জাদু বা Magic,যা একধরনের দৃষ্টিভ্রম ; যেখানে একজন ব্যাক্তি তার বিভিন্ন কলাকৌশল ও দক্ষতা দেখিয়ে কোন নির্দিষ্ট বস্তু বা ব্যাক্তিকে অবাস্তবরুপে পরিবর্তন ঘটিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করেন।সংজ্ঞাটি যেহেতু আমি সংজ্ঞায়িত করেছি তাই আমি নিজের ভাষায় আপনাদের যতটুকু সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যিনি জাদু করেন বা যে ব্যাক্তি জাদু করে বা তার পেশা এই কাজটি তাকে জাদুঘর বলা হয় এটি অবশ্য কারও অজানা নয়।বর্তমানে জাদু যেকোনো জায়গায় যেকোনো ভাবে করা হয়ে থাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।কারন,বর্তমানে জাদু এখন এতটাই জনপ্রিয় বিনোদনে পরিনত হয়েছে যে সবার আগ্রহ কমবেশি আছেই এটিকে ঘিরে। সাধারণত বেশিরভাগ জাদু করা হয়ে থাকে বিনোদন হিসেবে ,আর সেগুলিকে জাদুর ভাষায় বলা হয় সাদা-জাদু বা White Magic। তবে আবার এমন কিছু যাদুর অস্তিত্ব রয়েছে যা করা হয় ক্ষতির উদ্দেশ্যে যেটি হচ্ছে আমার আজকের আলোচ্য বিষয়বস্তু।
তবে,কালোজাদু হচ্ছে আরও ভয়ানক একটি জাদুর অধ্যায়। কারন এই জাদু যে ব্যাক্তির উপর করা হয় বা যে ব্যাক্তির জন্যে করা হয়ে থাকে পরোক্ষভাবে, সেই ভিক্টিম শারিরীক ও মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো মৃত্যুর কোলেও ঢোলে পড়ে। কালো-জাদু বলতে,কালো জাদু বা অন্ধকার জাদু হলো এমন এক ধরনের চর্চা যা অন্যের অনিষ্ট সাধনে কিংবা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে করা হয়।তাই ওই কালোজাদু বা Black Magic হচ্ছে জাদুর একটি ভয়ংকর দুনিয়া। সাধারন এই জাদুটি করা হয়ে থাকে অন্যের ক্ষতির উদ্দেশ্য পরোক্ষভাবে। প্রত্যেক্ষভাবে কেন করা হয়না কারন হয়ত বুঝতে পেরেছেন ; কারন, এই কালো জাদু করা একটি অপরাধ। ইসলামী শরিয়তের দিক থেকে কালো-জাদু শির্কের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ। কারন শির্ক হচ্ছে আল্লাহ তায়লার সাথে অন্য কাউকে তুলনা করা বা শরীক স্থাপন করা ; অপরপক্ষে, কালো-জাদু হলো আল্লাহ তায়লার দেওয়া নির্ধারিত ভাগ্যকে পরিবর্তন করা।
ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, ব্যক্তি জাদু করে তার জন্য আল্লাহতায়ালার এই বাণী প্রযোজ্য :
وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
অর্থ : ‘নিশ্চয়ই তারা জানে, যা তারা ক্রয় করেছে আখিরাতের জন্য কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১০২) অতঃপর বলেন, আমার অভিমত হলো, জাদুকরকে হত্যা করা, যদি সে জাদুকর্ম করে থাকে।
ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, যখন মুসলমান জাদুকর কুফুরি কালামের মাধ্যমে জাদু করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার তাওবা ও গ্রহণীয় হবে না। আর না তাকে তাওবা করতে বলা হবে। কেননা এটা এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য আল্লাহতায়ালা জাদুকে কুফুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ
অর্থ : ‘তারা যাকেই জাদু বিদ্যা শিখাতো তাকে বলে দিত, তোমরা (জাদু শিখে) কুফুরি করো না, নিশ্চয়ই, আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষা।’ (সুরা বাকারা : ১০২)
▧ কালো জাদু কীভাবে ভাগ্য পরিবর্তন করে,
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির শুরুতে সবার ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিলেন।জীব-নমৃত্যু,হায়াত,রিজিক সবকিছুই আল্লাহ তায়ালা সকল প্রানীকূলের জন্য নির্ধারিন করে রেখেছিলেন।তবে তা একমাত্র যে উপায়ে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় তা হলো কালো-জাদু।যার মাধ্যমে একটি সুন্দর জীবনকে ধ্বংসের দিকে নেওয়া সম্ভাব। তাই কালোজাদু ধর্মীয় বিশ্বাসে মারাত্মক কুফরী কাজ।
▧ কালো-জাদুর কিছু ইতিহাস,
রবার্ট এম প্লেসের বিখ্যাত বই ‘বুক, ম্যাজিক অ্যান্ড অ্যালকেমি’তে বলা হয়েছে আত্মার আদিম, আচারিক উপাসনাই জন্ম দিয়েছিল সাদা ও কালো দুই জাদুরই। সেখান থেকেই বইতে বইতে আধুনিক সময়েও প্রবেশ করে কালো জাদু। এর পিছনে অন্যতম উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে আত্মাকে (অথবা অন্য লোকের বাসিন্দা অপশক্তিকে) বন্দি করে তার সাহায্যে অন্যের ক্ষতিসাধন করা কিংবা নিজের কোনো হিতসাধন। সাধারণ ভাবে সাদা জাদুকে উঁচু শ্রেণির জাদু ধরা হয়। একই ভাবে কালো জাদুকে নীচু শ্রেণির জাদু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুই জাদুর উদ্দেশ্যগত ফারাকের কারণেই এই শ্রেণিবিভাগ। যদিও এই বিভাজন এতই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, যে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে এদের আটকে রাখা মুশকিল। বিশেষ করে ভালো উদ্দেশ্যে যে জাদুর জন্ম, সেই জাদুকেই খারাপ কাজে ব্যবহার করার উদাহরণ কম নেই।
১৯৬৯ সালে লেখা ‘স্যাটানিক বাইবেল’ নামের বইয়ে বিখ্যাত কালো জাদুবিদ অ্যান্টন লাভে লিখছেন, ‘সাদা জাদু ব্যবহৃত হয় ভালো তথা স্বার্থহীন উদ্দেশ্যে। এবং কালো জাদু, আমরা বলে থাকি, খারাপ উদ্দেশ্যে। শয়তানবাদে এমন কোনো সীমারেখা নেই। জাদু শেষ পর্যন্ত জাদুই। সেটা কাউকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে কিংবা কাউকে রুখতে। একজন শয়তানবাদী, জাদুকর হিসেবে, সিদ্ধান্ত নেবে সে জাদুশক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে।’
হারুত এবং মারুত (সূরা আল-বাকারায় কুরআনে উল্লিখিত) দুজন ফেরেশতা ছিলেন যারা এই পৃথিবীতে কালো জাদু আনার পিছনে ছিলেন বলে পরিচিত।
▧ কালো জাদুর কিছু পদ্ধতি,
কালো জাদুর কাজে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণী। যেমন: পাখি, মাছ, ছাগল, পুতুল, মূর্তি। যাকে লক্ষ্য করে কালো জাদু করা হয়, তার ব্যবহৃত পোশাকের অংশ, নখ, চুলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন তাবিজ-কবচ কাক, প্যাঁচা, ডাহুক-জাতীয় পাখি বা মাছের শরীরের ভেতর ভরে কার্যসিদ্ধ করা হয়। এছাড়া কোরআন শরীফের নির্দিষ্ট কিছু সূরার আয়াত বাম দিক থেকে লিখে তাবিজে কবচ করাও অন্যতম।এছাড়া আরও বিভিন্নভাবে কালোজাদু করার হয়ে থাকে।
শ্রদ্ধেয় পাঠকগন, হয়ত আমি আপনাদের সামনে কালো-জাদু ও তাঁর ক্ষতিকর প্রভাব-সমূহ এই কন্টেন্টে কিছুটা আলোকপাত করতে সক্ষম হয়েছি।লেখায় ভূলত্রুুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে মার্জনা করবেন।বরাবরের মতো আমি মোরশেদুর রহমান চৌধুরী।