ট্রান্স-জেন্ডার মতবাদ | পর্ব : ০১


বর্তমান সময়ের আলোচিত, সমালোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ। বর্তমান সময়ে এসে আমাদের দেশে এটি আলোচনার বিষয় হলেও প্রায় ২ যুগ আগে থেকেই শুরু হয় চক্রান্ত।এই মতবাদ কে এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা যায় পশ্চিমা বস্তাপঁচা মতবাদ বলে।বর্তামানে কথার মারপ্যাচে এবং খুব সূক্ষ্মভাবে এই ট্রানজেন্ডারবাদ কে স্বীকৃতি  দেওয়ার জন্য কাজ চলছে আমাদের দেশে। এই নিয়ে অনেকের মনে জেগেছে অনেক প্রশ্ন। কী এই ট্রান্সজেন্ডার? কি তাদের উদ্দেশ্য? সমাজে কেন এরা ক্ষতিকর? হিজড়া আর ট্রান্সেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য কি? এইরকম আরো অনেক ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ জনগণের মনে।এই সকল প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হবে কাকতালীয় এর ট্রান্স বিষয়ক সিরিজে। তাহলে শুরু করা যাক,,,
প্রথমেই আসা যাক,

ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কী?
পশ্চিমা বিশ্বের উপর রাজত্ব কায়েম করা এই অদ্ভুত মতবাদের শাব্দিক অর্থ "রূপান্তরকামীতা"।অনেকে একে "জেন্ডার আইডেন্টিটি" বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলে থাকেন। 
এই মতবাদের মূল কথা হচ্ছে, কোন পুরুষ যদি নিজেকে মনে মনে নারী বলে মনে করে, তাহলে সে নারী।এবং সমাজ,আইন তাকে নারী বলে স্বীকৃতি দিতে হবে। যদিও সেই পুরুষ শারিরীক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ হোক,২-৩ বাচ্চার বাপ হোক তাতে কিছু যায় আসে না।
একই ভাবে নারীদের ক্ষেত্রে যদি সে নিজেকে মনে মনে ছেলে দাবী করে তবে সে ছেলে। যদিও তার মাসিক হোক , সে গর্ভবতী হোক,শারীরিক ভাবে ১০০% সুস্থ হোক তাতে কিছু যায় আসে না। 
ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রধান দাবীঃ
১| জন্মগত দেহ যাই হোক না কেন,কোন নারী নিজেকে পুরুষ দাবি করলে তাকে পুরুষ এবং কোন পুরুষ নিজেকে নারী দাবি করলে তাকে নারী হিসেবেই সামাজিক ও আইনি ভাবে মেনে নিতে হবে। 
২|মানুষ ইচ্ছে মত পোশাক পড়বে,ইচ্ছে মতো ওষুধ ও অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে নিজের দেহ কে বদলে নিবে।কেউ অস্ত্রোপাচার না করেও নিজে মনে মনে যা দাবি করবে তাই মেনে নিতে হবে কোন কথা ছাড়াই।
৩|রাষ্ট্র ও সমাজ কোন বাধা দিতে পারবে না। বরং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে।স্কুল কলেজে বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকেই এই মতবাদ শিক্ষা দিতে হবে । 

এখন অনেকের মনে হতে পারে,
ট্রান্সজেন্ডার হয়তো হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ দের নিয়ে কোন আন্দোলন! হয়তো এটা মানবিক বিবেচনা আর অধিকারের বিষয়। হয়তো কোন শারীরিক সমস্যা। 
কিন্তু না, এই মতবাদ সত্যিকার অর্থেই বিচিত্র, বিকৃত ও নোংরা। এর সাথে শারীরিক ত্রুটি বা এই জাতীয় সমস্যার বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নেই।শারিরীক ভাবে ১০০% সুস্থ, কোন নারী বা পুরুষ যারা একসময় স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছে, সন্তান জন্ম দিয়েছে কিন্তু এক পর্যায়ে এসে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গে পরিচয় দিচ্ছে, পোশাক পড়ছে বা সার্জারি করে লিঙ্গ পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।অধিকাংশই কোন অস্ত্রোপাচার ছাড়া নিজে বিপরীত লিঙ্গের দাবি করছে এবং এর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছে।

হিজড়া বনাম ট্রান্সজেন্ডারঃ
ট্রান্সজেন্ডার কে স্বীকৃতি দিতে হিজড়া শব্দ টি ব্যবহার করে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করছে এই বিকৃত  মানসিকতার লোকেরা।বাস্তবে হিজড়ার সাঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারদের কোন সম্পর্ক নেই।
হিজড়া হচ্ছে এমন এক গোষ্ঠী যারা জন্মগত কিছু সমস্যা নিয়ে জন্ম গ্রহন করেছে। এই ধরনের মানুষ খুবই কম।পুরো পৃথিবী জুড়ে ১% এর কম মানুষ এই সমস্যা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে।এই ধরনের মানুষদের মাঝে পুরুষ ও নারী উভয় রকম বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।এনাদের কে "ইন্টারসেক্স" বা "আন্তঃলিঙ্গ" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।মূলত হিজড়াদের তৃতীয় কোন লিঙ্গ হিসবে উপস্থাপন করা উচিত নয়।তারাও নারী অথবা পুরুষ, তবে তাদের যৌন অঙ্গ, গঠন বা জিনগত কিছু ত্রুটি থাকে। যে কারণে এ ধরনের সমস্যাকে ডিসঅর্ডার অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি)-ও বলা হয়।
অন্যদিকে নিজেদের ট্র্যান্সজেন্ডার দাবি করা লোকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তলিঙ্গ বা ইন্টারসেক্স না। তাদের কোনো ধরনের ডিএসডি (ডিসঅর্ডার অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট) নেই। তাদের জন্ম হয়েছে সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ নিয়ে।
যারা নিজেদের ট্র্যান্সজেন্ডার নারী দাবি করে তারা পুরুষ। তাদের অণ্ডকোষ আছে, পুরুষাঙ্গ আছে, তাদের শরীরে আছে এক্সওয়াই ক্রোমোসোম। নিজেদের যারা ট্র্যান্সজেন্ডার পুরুষ বলছে তারা আসলে নারী। তাদের জন্ম জরায়ু, ডিম্বাশয়, যোনী এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব নিয়ে। তাদের দেহে আছে এক্সএক্স ক্রোমোসোম। অথ্যাৎ  এরা ১০০% সুস্থ। শুধু নিজেকে মনে মনে যা ভাবে তাই প্রকাশ করতে নিজেকে অন্য লিঙ্গের মতো সাজায়।যা সরাসরি  ভণ্ডামি। 

অস্ত্রোপাচার করে কি লিঙ্গ পরিবর্তন সম্ভব? 
না,আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ সার্জারির মাধ্যমে নারী থেকে পুরুষ বা পুরুষ থেকে নারী হওয়া যায়। মিডিয়াগুলোকে এ ধরনের খবর প্রচার করতে দেখা যায় খুব আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। তথাকথিত লিঙ্গ পরিবর্তন সার্জারির মাধ্যমে কেউ আসলে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হয় না। এগুলো মূলত এক ধরনের কসমেটিক সার্জারি। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেবল বাহ্যিকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এগুলো দিয়ে পুরো প্রজননব্যবস্থা বদলায় না।
যার জন্ম হয়েছে নারী হিসেবে, শত অস্ত্রোপচার করা হলেও তার শরীর বীর্য উৎপাদন করতে পারবে না। তার ঔরসে সন্তানের জন্ম হবে না। যার জন্ম হয়েছে পুরুষ হিসেবে, শত অস্ত্রোপচার করা হলেও সে সন্তান জন্ম দিতে পারবে না।
তাহলে এই ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ বলে আসলে কী বোঝানো হয়? এ ধরনের সার্জারিতে আসলে কী করা হয়?
একদম সোজাসাপ্টাভাবে বললে, একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ সার্জারির মানে হলো অপারেশন করে তার বুকে কৃত্রিম ‘স্তন’ বসানো, তার অণ্ডকোষ ফেলে দেওয়া, পুরুষাঙ্গ কেটে উল্টে (invert) দিয়ে দু’ পায়ের মাঝখানে একটা ছিদ্র তৈরি করা।
নারীদের ক্ষেত্রে ‘লিঙ্গ পরিবর্তন’ এর অর্থ হলো, তার স্তন কেটে বাদ দেওয়া, শরীর থেকে জরায়ু এবং গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য অংশ কেটে ফেলে দেওয়া, তারপর হাতের কবজি কিংবা পা থেকে কিছু পেশী নিয়ে কৃত্রিমভাবে একটি ‘পুরুষাঙ্গ’ তৈরি করা।
অবশ্য মনে রাখবেন এই কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ বা জরায়ু কখনো বাস্তবের মতো কাজ করেনা।

ট্র্যান্সজেন্ডার দাবিদারদের মধ্যে অর্ধেকের মতো হরমোন ট্রিটমেন্ট নেয়। আর লিঙ্গ পরিবর্তন সার্জারি করায় ২৫% এর মতো।

অন্যদিকে অপারেশন করে ‘রূপান্তরিত’ হওয়া মানুষদের মধ্যে অনেকে ভুল বুঝতে পেরে যেতে চাইছে আগের অবস্থায়। কিন্তু ফেরার পথ যে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে তারা। তাই বাড়ছে হতাশাগ্রস্থতা, আত্মহত্যার প্রবণতা।

চলবে............

লেখক : তানভীর হোসেন ( SI & WRITER)

রেফারেন্সঃ প্রকাশিতব্য  বই 'অবক্ষয়কাল' (আসিফ আদনান।)

ট্রান্স - জেন্ডার মতাবাদ | পর্ব :০২ 
আসছে শিগ্রই...




Post a Comment

Previous Post Next Post