ইহুদী চক্রান্তের নীলনকশা | পর্ব : ০১


ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত  হলো মূলত কোনো ঘটনার  এমন ব্যাখ্যাকে বুঝায়,যা সুস্পষ্ট প্রমান ছাড়া কোনো গভীর ক্রিয়াকৌশল। তেমনি একটি আলোচিত চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র হচ্ছে ইহুদি চক্রান্ত। 
ইহুদিদের অস্তিত্ব মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল সেই প্রাচীনকাল থেকেই,তাইতো এই যুগে এসেও সাধারণ মানুষের  এই কৌতুহল কিংবা জানার আগ্রহ শেষই হচ্ছেনা।তার পেছনেও অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে।আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আজকের এই আধুনিক পৃথিবী যেসব খুটির ওপর ভর করে আছে, তার প্রতিটির পেছনেই লুকিয়ে আছে ইহুদিদের অদৃশ্য আধিপত্য। শিক্ষা হতে শুরু করে সমাজনীতি, রাজনীতির মাঠে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে তাদের লাখো ইকোনমিক ইনভেস্টমেন্ট।

আদিমকাল থেকে শুরু করে আজকের এই যুগে এসেও তারা নিজেদেরকে নানা কূটনীতিক কলাকৌশলের মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছে।তাইতো ইহুদিদের বলা হয় প্রোপাগাণ্ডা মেশিন।তারা এই প্রোপাগাণ্ডাকে দুটি কাজে ব্যাবহার করে। 
১.সমাজে নিজেদের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা।
২.অন্যদের প্রচারিত যেকোনো মতবাদকে উপেক্ষা করে গুজব হিসেবে উপড়ে ফেলা।
ইহুদিরা নিজেদের স্রষ্টার প্রিয় জাতি হিসেবে মনে করে থাকে।তারা এও দাবি করে থাকে যে তাদের পেছনে স্রষ্টার অদৃশ্য আশীর্বাদ রয়েছে।যার কারনে তারা সংখ্যালঘু হয়েও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে যুগের পর যুগ।তবে এই কথাগুলো একান্ত তাদের বিশ্বাসের উপরই প্রতিষ্ঠিত। মানবকল্যানের নামে তারা মানবাধিকার হরন,সমাজে নিজেদের একছত্র আধিপত্য, অন্য সমাজের গুরুত্বকে উপেক্ষার কারনেই তারা সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে।তবে এই নীতিতে কেবল গুটিকয়েক মানুষ মানতে রাজি,কারন যা করার তারা তা আগেই ঘটিয়ে ফেলেছে।ইতিহাস থেকে শুরু করে মিডিয়াগুলোকে তারা নিজেদের হস্তমুঠ করে নিয়েছে।

ইহুদিরা কখনো নিজেদের কাজকর্মে বহিরাগত হস্তক্ষেপ পছন্দ করেনা।এমন নয় যে ইহুদিরা শুধু ইসলাম ধর্মের জন্য কিংবা মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর। বরং এরা নিজেদেরকে  পৃথিবীবাসীর কাছে প্রভু হিসেবে এবং পৃথিবীবাসীকে তাদের গোলাম হিসেবে দেখে,তাই এরা সকল গোষ্ঠীর মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। পূর্বের ইতিহাসের পাতায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এরা কোনো দেশেই বেশিদিন স্থায়ী বসত-ভিটা গড়তে পারেনি।মূলত ইহুদিদের ব্যতিক্রমধর্মী বেশ কিছু  মানসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের অন্য জাতির তুলনায় পৃথক রেখেছে।যেমন-সজাতির প্রতি সহনশীলতা কিন্তু অন্য জাতির প্রতি অসহনশীলতা।তাছাড়াও সামাজিক প্রতিপত্তি নিয়ে অন্যদের উপর অহংকার প্রদর্শন ছিলো এদের অন্যতম অভ্যাস।মূলত এই ভেদাভেদের জেরে ইহুদিরা প্রায় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো।
১১০০-১৬০০ খ্রিস্টাব্দ  অব্দি এরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো।
ইংল্যান্ড -১২৯০
পর্তুগাল-১৪৯৭
স্পেন-১৪৯২
ফ্রান্স-১১৮২,১৩০৬,১৩২১ , ১৩৯৪
লিথুনিয়া-১৪৪৫,১৪৯৫
ডসলিসিয়া-১১৫৯,১৪৯৫
অস্ট্রিয়া-১৪২১
হাঙ্গেরি -১৩৪৯,১৩৬০
নেপোলিস-১৫৪১
ক্রিমিয়া -১০১৬,১৩৫০
জার্মানি-১৩৪৮, ১৫১০,১৫৫১
ইহুদিদের সম্পদের প্রতি রয়েছে প্রবল আকাঙ্খা । তারা চায় ভিন্ন জাতি কিংবা ধর্মের মানুষ যেন তাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করতে না পারে।ইহুদিদের  বিরুদ্ধে কেউ নেতিবাচক কোনো প্রচার চালাবে,এটা তারা কখনো মানতে পারেনা।তাইতো পত্রিকা থেকে সংবাদমাধ্যম সকল প্রতিষ্ঠান তারা টাকার মাধ্যমে কিনে নেয়, যা এখনকার প্রেক্ষাপটে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে।আবার টাকার লোভ দেখিয়ে তারা প্রশাসনকে নিজের পকেটে পুরে রাখে।তারা চায় যেন,খোদ আইন বিভাগ তাদের পক্ষে মন্তব্য জ্ঞাপন করে।এভাবেই তারা নিজেদের সুরক্ষাবলয় নিশ্চিত করে হয়ে উঠে একটি সমাজের মূল গডফাদার। এরপর এরা এতটাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠে, যখন খোদ সরকার এদের বিপক্ষে কথা বলার আগে ভাবতে হয়।
ইহুদিদের এই দৌরাত্ম এইখানেই শেষ নয়।এরা পৃথিবীজুড়ে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করতে চায়।মানুষ যেন এদের বিরুদ্ধে এক হতে না পারে,সেইজন্য তারা সাধারণ মানুষের ভেতর ধর্ম,জাতিগত  ভেদাভেদ সৃষ্টি করে।যদি কোনো সসংবাদমাধ্যম এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চায় তবে সেই প্রতিষ্ঠানের উপর নোংরা গুজব চালিয়ে দেউলিয়া হতে বাধ্য করে।
এখনকার প্রেক্ষাপটে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের সকল চক্রান্ত কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে।বিশেষ করে ব্যাবসা-বানিজ্যে উঁচু পদগুলোতে  আজ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যার ফলে তারা নিজেদের মত প্রকাশের সাধীনতাকে কিংবা সবকিছুতে নিজেদের প্রাধান্যগুলোকে বাস্তবায়ন করছে।ইতিহাস বারবার একটা বিষয় স্পষ্ট করেছে যে, ইহুদিরা আদিমকাল হতেই শাষকরাষ্ট্র হতে চেয়েছে।তারা চেয়েছে পৃথিবীর প্রতিটা রাজ্য তাদের কাছে মাথা ঠেকিয়ে চলবে,তারাই হবে সকল ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু।কিন্তু তাদের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হয়নি।তাইতো নিজেদের জন্য তারা একটি নিরাপদ আশ্রয় খুজেছিলো। যেখান থেকে ইহুদিরা সারা  পৃথিবীকে শাসন করবে।এবং অবশেষে তারা জেরুজালেমে নাটকীয় প্রবেশ ঘটায়।
খ্রিস্টান ধর্মমতে আব্রাহাম(মুসলিম ধর্মমতে নবি ইব্রাহিম (আ:))যখন মেসোপোটেমিয়ায় ছিলেন  তখন স্রষ্টা তার সাথে দেখা দিলেন এবং তার সাথে একটি সন্ধি করেন।(ইহুদিরা মনে করে থাকে তাদের  ইজরাইল জাতির মূল সূচনালগ্ন এখান থেকেই) স্রষ্টা তাকে বহুলোকের পিতা(আব্রাহাম) উপাধি দেন
(বাইবেল;জেনেসিস.১৭:১-৮)
বাইবেল অনুযায়ী মোজেস(মুসলিম ধর্মমতে মুসা(আ:))যখন ঈশ্বরের সাথে সিনাই পাহাড়ের চূড়ায় দেখা করতে যান তখন তার অনুপস্থিতিতে ইসরাইলবাসী তথা ইহুদীরা সোনার বাছুর তৈরি করে পূজা করতো,যা Golden Calf নামে পরিচিত। তারা সকলকে বোঝাতে চাইতো সম্পদই ঈশ্বর।সকল উপাসনা  কেবল তারই জন্য। যারা  সম্পদের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবে তাদেরকেই সমাজের উচ্চশ্রেণির জনগোষ্ঠী বানানো হতো।আর এই কারনেই ইহুদীরা যে দেশে প্রবেশ করতো সেই দেশকেই তারা শোষণ করে ধংস করে দিতো।যখনই ইহুদীরা কোনো নতুন দেশে প্রবেশ ঘটাতো তখন তারা ভিখারির বেশে থাকতো,তাই সাধারন জনগণ কিংবা রাজ্যের রাজারা তাদের তেমন কোনো প্রাধান্য দিতো নাহ।কিন্তু কিছুদিন না পেরোতেই তারা সম্পদে এতটাই ফুলে-ফেঁপে উঠতো যে রাজ্যের রাজাদের  তাদের কাছে হাত পাততে হতো।অবশেষে দেখা যেতো,রাজ্যের সাধারণ প্রজাগণ গরিব হয়ে যেতো আর ইহুদীরা সম্পদশালী হয়ে উঠতো।মূলত সম্পদের প্রতি মোহ থাকার দরুন তারা সকল ধরনের ক্রিয়াকৌশল খাটাতো।এই কারনেই ইহুদিদের চেয়ে সাধারনেরা চিন্তাভাবনায় অনেক পিছিয়ে।যেখানে আমরা অতীত ভুলে গিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রস্তুতি নেই,ঠিক অপরদিকে তারা অতীতকে স্মরণ করে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যুগে যুগে নয়া কানুনের জন্ম দিয়ে পৃথিবী শাসনের সপ্ন দেখছে।
❝কয়েকটি বিষয়ের কারনে ইহুদীরা সমালোচিত হয়ে আসছে।সেগুলো হলো-
১.পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি
২.দেশপ্রেমহীনতা
৩.সামাজিক অনুশাসন ভঙ্গ করা।
৪.তথ্য পাচার করা
যখনই তাদের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব দেখা দিতো তখনই তাদের দেশছাড়া করা হতো।কিন্তু তাদের শিক্ষা হতো নাহ।তারা চাইতো একটা সাধীন রাজ্য গড়ার,যেখান থেকে পুরো পৃথিবীকে পরিচালনা করা হবে।এবং সেখানেই পৃথিবীর সকল সম্পদ কেন্দ্রীভূত করা হবে।এই মনোভাব নিয়েই ইহুদীরা বিশ্ব রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের গুটি চালাচ্ছে।
উনবিংশ শতাব্দীর দিকের একজন প্রভাবশালী ইহুদি হলেন Theodor Herzl। যাকে নতুন ইসরাইল রাষ্টের অন্যতম রুপকার বলা হয়।তার একটি উক্তি ইহুদিদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। সেটি হলো-'We are  a people -One people। তিনি পরিষ্কার ভাবে বলেছিলেন,"নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পৃথক জাতীয়তাবাদ এর কোনো বিকল্প নেই"।ইহুদিদের প্রথম সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৭ সালে।সেখানে Theodor Hrezl বলেন, "যখন আমরা কোনো বিপদে পতিত হই,তখন এক অদম্য শক্তিকে সঙ্গে করে বিপ্লবী হয়ে উঠি। আর তখন আমাদের পরাজিত করা সম্ভব হয়না"।
১৯০২ সালে BRC(British Royal Commission) এর উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।তখন সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে মেজর Evans Gordan-এর প্রশ্নের জবাবে Dr.Herlz বলেন-
" আমি আপনাদের এমন একটা রাষ্ট্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, যার এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।তবে তা খুব দ্রুত পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিবে।আপনারা চাইলে রাষ্ট্রটির আগে 'ইহুদি' যোগ করতে পারেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমেনদের হটিয়ে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের হাতে ফিলিস্তিনের (Palestine) চাবি তুলে দেয়।তারপর   ফিলিস্তিনকে হস্তমুঠো করে পুরো পৃথিবীতে এক এক করে তাদের আধিপত্য বাড়াতে থাকে।
সময়টা ২৫ শে জুন ১৯২০,American Hebrew ম্যাগাজিনের মুখপাত্র Herman Bernstein তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।যাতে লেখা ছিলো-
 আমেরিকান বিচার বিভাগের এক প্রতিনিধি  "The Jewish Peril" শিরোনামে লিখা একটা পান্ডুলিপি তার কাছে নিয়ে আসেন।যেটি ১৯০৫ সালে রাশিয়ান কোনো প্রকাশনী হতে প্রকাশ করা হয়েছে(যা ইহুদিরা বাজার হতে উঠিয়ে ফেলে)।সেখানে বড় বড় অক্ষরে লিখা ছিলো "পুরো পৃথিবীর জনগোষ্ঠীকে ইহুদীরা নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসবে এবং পান্ডুলিপিতে সেই সম্পর্কে অনেক দিকনির্দেশনা দেয়া ছিলো।
যেই পান্ডুলিপিটি নিয়ে সমগ্র রাশিয়াতে এত হইচই সৃষ্টি হয়েছিলো সেটির নাম-“ Protocols of the Learned Elders of Zion”।এরপর ১৯২০ সালে এই প্রটোকলের উপর ভিত্তি করে লন্ডনের Kzre and Spottiswoode ম্যাগাজিন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।তখন লন্ডনে থাকা ইহুদিদের মধ্যে আতং সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে তারা London Times ম্যাগাজিনকে  ব্যাবহার করে ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়।
ঠিকই ধরেছেন এটাই হচ্ছে সেই অভিশপ্ত নীলনকশা,যার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য যুদ্ধে -বিগ্রহের জন্ম দিয়েছে।মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে।অপসংস্কৃতিতে সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।শিক্ষাব্যবস্থায় নাস্তিকতার জন্ম দিয়েছে।বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি চুক্তিগুলোতে ইহুদিরা সবচে বেশি সুযোগ লুফে নিয়েছিলো।
অবশ্য ইহুদিদের পক্ষ হতে এই প্রটোকলের ব্যাপারে সোজাসাপটা কোনো উত্তর না এলেও এই প্রটোকল অনুযায়ী ইহুদিরা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।তাই এই প্রটোকলকে নিছক মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়া যায়না।

রেফারেন্স :জিউইস এনসাক্লোপিডিয়া,উইকিপিডিয়া, হেনরি ফোড এর লিখা বই:দ্যা সিক্রেট অব জায়োনিজম।

❝লেখক : মাতিন রায়হান ( SI & WRITER)❞

ইহুদী চক্রান্তের নীলনকশা | পর্ব :০২ 
আসছে শিগ্রই...







1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post